একটি বুলেটঃ একটি স্বপ্নের মৃত্যু

গ্রামের মেঠোপথে সন্ধ্যার আবছা আলোতে খেলা করছিলো ছোট হৃদয়। তখন থেকেই ছেলেটা ছিলো স্বপ্নবাজ। কাঠমিস্ত্রি বাবার জরাজীর্ণ ঘরে থেকেও তার চোখে ছিলো উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন। মা অর্চনা রানী প্রতিদিন ভাত রান্নার সময় ছেলেকে বলতেন, "তুই বড় হবি রে বাবা, আমাদের কষ্টের দিন শেষ হবে।" মা-বাবার এই আশায়, বড় বোনের ভালোবাসায়, আর নিজের অধ্যবসায়ে হৃদয় একদিন পটুয়াখালী থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে পড়তে গেল।

হৃদয়ের জীবনটা ছিল এক যুদ্ধক্ষেত্র। বাবার সামান্য আয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হত। তবু পড়াশোনার খরচ জোগাতে হৃদয় টিউশনি করত। সে ছিল সবার প্রিয়। ক্লাসের বন্ধুদের জন্য হাসিমুখে পাশে দাঁড়ানো আর গ্রামের ছেলেমেয়েদের অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠা তার স্বভাব। তার ইচ্ছা ছিল, ইতিহাসের অধ্যাপক হয়ে নিজের পরিবারের দুঃখ ঘুচাবে।

কিন্তু সময় কখনো কখনো নিষ্ঠুর হয়। গত বৃহস্পতিবার হৃদয় যখন টিউশনি শেষে বাসায় ফিরছিল, তখন চট্টগ্রামের পথে সংঘর্ষ চলছিল। দাঙ্গার আওয়াজ, মানুষের চিৎকার—সবকিছু থেকে বাঁচতে সে দৌড়াতে শুরু করেছিল। কিন্তু হঠাৎ এক গুলির শব্দে তার স্বপ্ন থমকে গেল। রাস্তায় লুটিয়ে পড়ল হৃদয়।

খবর পেয়ে মা অর্চনা রানী ছুটে গেলেন ঢাকায়। হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই পেলেন ছেলের মৃত্যুর খবর। যে মা প্রতিদিন রান্নার হাঁড়িতে স্বপ্নের রুটি সেঁকতেন, সেই মা আজ ছেলের রক্তমাখা কফিন দেখছেন। কফিনের পাশে দাঁড়িয়ে বাবা রতন চন্দ্র বললেন, "আমার ছেলেটা তো শুধু স্বপ্ন দেখেছিল। লেখাপড়া শেষ করে আমাদের ভালো রাখার। কিন্তু একটি গুলি সব শেষ করে দিল।"

বোন মিতু রানী ছেলেবেলার গল্প শুনিয়ে বিলাপ করছিলেন, "আমার ভাইটা এমন ছিল, যে একবারও আমাদের অমঙ্গল চায়নি। কী করে সইব আমরা ওর অভাব!"

হৃদয়ের বন্ধুরা বলছিল, সে ছিল একদম আলাদা। তার চোখে ছিলো বড় কিছু করার বাসনা। বন্ধুরা মেনে নিতে পারছিল না, তাদের হাসিখুশি হৃদয় আর নেই।

রাতে হৃদয়ের লাশ পৌঁছালো পটুয়াখালীর মহাশ্মশানে। মা অর্চনা রানী বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। ছেলের নিথর দেহের কাছে গিয়ে বারবার চিৎকার করছিলেন, "তুই তো বলেছিলি, বড় হবি। এখন কোথায় গেলি তুই?"

হৃদয়ের গল্প এখানেই শেষ নয়। তার রক্তমাখা স্বপ্ন বয়ে বেড়াবে চট্টগ্রামের মাটি, পটুয়াখালীর আকাশ। হৃদয় চন্দ্র তরুয়ার নাম ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে। শুধু একটি গুলি, একটি দুঃসহ দিন, একটি স্বপ্নকে ছিন্ন করে দিতে পারলেও, তার সংগ্রাম বেঁচে থাকবে সবার হৃদয়ে।

( Ali Yousuf Ctg -এর ফেসবুক প্রোফাইল থেকে সংগৃহীত) 

Join our Facebook group

👉 👉 [এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত পোস্টগুলো ফেসবুক এবং ইমেইল থেকে সংগৃহীত। উক্ত লেখার বক্তব্য ও দায়-দায়িত্ব লেখকের একান্ত নিজস্ব। তাই প্রকাশিত লেখার বিষয়ে কোনো মতামতের জন্য এডমিন দায়ী নয়।]