ছেলে আর মেয়ে বন্ধুত্ব

শেক্সপিয়র বলেছিলেন, "একজন ছেলে কখনো একজন মেয়ের বন্ধু হতে পারে না। কারণ এখানে আবেগ আছে, দৈহিক আকাঙ্ক্ষা আছে।

"একই কথা বলেছেন আইরিশ কবি (Oscar Wilde) অস্কার ওয়াইল্ড। তিনি বলেন-"নারী এবং পুরুষের মাঝে কেবলই বন্ধুত্বের সম্পর্ক থাকা অসম্ভব। যা থাকতে পারে তা হলো আকাঙ্ক্ষা, দুর্বলতা, ঘৃণা কিংবা ভালোবাসা নয়তো যৌনতা"।

হুমায়ূন আহমেদ বলেছিলেন, "ছেলে আর মেয়ে বন্ধু হতে পারে কিন্ত তারা অবশ্যই প্রেমে পড়বে। হয়তো খুবই অল্প সময়ের জন্য অথবা ভুল সময়ে। কিংবা খুবই দেরিতে, আর না হয় সব সময়ের জন্য। তবে প্রেমে তারা পড়বেই।"

সত্যি বলতে, ছেলে ও মেয়েতে শুধুমাত্র বন্ধুত্ব অসম্ভব ও প্রকৃতি বিরুদ্ধ। কেননা শুধুমাত্র বন্ধুত্ব হলে প্রকৃতি নিজের অস্তিত্ব হারাবে। চুম্বক আর লোহা কখনো পাশাপাশি থাকতে পারে না। এখানে পরস্পর পরস্পরকে প্রকৃতিগতভাবে আকৃষ্ট করবেই। যদি কেউ তা এড়িয়ে যায় বা অস্বীকার করে তবে সে ভণ্ডামি করছে নয়তো পরিবার পরিজনজনকে ধোঁকা দিচ্ছে।

বিশ্বনবী এবং সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব, সর্বশ্রেষ্ঠ দার্শনিক হযরত মুহাম্মদ (স:) বলেছেন, "একজন নারী ও একজন পুরুষের মধ্যে তৃতীয় আরেকজন থাকে; সে হলো শয়তান।"

সুতরাং এটি নির্দ্বিধায় বলা যায়, মা-বাবা, স্বামী-স্ত্রী, শশুর-শাশুড়ি, ভাই-বোন তথা রক্তের সম্পর্কের ইসলাম সমর্থিত মহররম নারী-পুরুষ ছাড়া পরিচিত বা অপরিচিত, আত্মীয় বা অনাত্মীয়, সহপাঠী বা সহপাঠীনি যেই হোক, বিবাহিত-অবিবাহিত যে কোনো নারী-পুরুষ গোপনে বা প্রকাশ্যে অথবা অন্য কোনো মাধ্যমে অল্প হোক বেশি হোক, এমনি হোক বা তেমনি হোক; যে কোনো কথাবার্তা, গল্পস্বল্প, চিঠিপত্র, চ্যাটিং, যোগাযোগ এমনকি চোখাচোখি, দেখাদেখি বা ইশারা ইঙ্গিত কোনভাবেই নিরাপদ নয়। তাছাড়া ইসলামিক দৃষ্টিতেও তা যেনার পর্যায়ে পড়ে।

কারণ আগুনের পাশে মোম গলবেই। এক কথায়, পরনারী ও পরপুরুষের সাথে যে কোনো অপ্রয়োজনীয় বা অযথা কথা, দেখা, বলা, ইশারা, ইঙ্গিত, যোগাযোগ একসময় প্রেম বা অবৈধ সম্পর্কে জড়াবেই, দেহমনে মিলনের আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হবেই, অসৎ বা যৌন সম্পর্কে রুপ নিবেই। এটি Universal Truth - চিরন্তন সত্য।

সুতরাং বর্তমানে বিভিন্ন মাধ্যমে বা সরাসরি ছেলেমেয়ে বা নারীপুরুষ যারাই বন্ধুত্ব বা ফ্রেন্ডশিপ করছেন বা পরিচয় হচ্ছেন অথবা বিভিন্ন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং এর মাধ্যমে ফ্রেন্ডশিপ, চ্যাটিং, ভয়েস কল, ভিডিও কল ইত্যাদি করছেন, তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, আপনি হয়তো মনে করছেন, "তেমন কিছুই তো করছিনা, শুধু একটু চ্যাট করছি, শুধু একটু কথাইতো বলছি, শুধু একটু দুষ্টুমি করছি !! আর কিছুইতো করছিনা।

কিন্তু আপনি হয়তো বুঝতেই পারছেন না যে, এই দুষ্টুমি করতে করতে নিজের অজান্তেই আপনি তার সাথে বরং নষ্টামি-ই করে যাচ্ছেন। অথচ আপনার মনে হচ্ছে, আপনি মন্দ কিছু করছেন না। কারণ শয়তান মন্দ কাজ গুলোকে দৃষ্টিনন্দন করে মানুষের সামনে উপস্থাপন করে।

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন-

"শয়তান মানুষের সামনে অশ্লীল ও খারাপ বিষয়কে আকর্ষণীয় ও ভালো হিসেবে উপস্থাপন করে। আল্লাহ বলেন, 'অবশ্যই সে (শয়তান) তোমাদেরকে মন্দ ও অশ্লীল কাজের নির্দেশ দেয়।" (সুরা বাকারা:১৬৯)।

কাজেই যারা নিজেদের পরিবার বা সংসারকে ধোকা দিয়ে এরূপ কাজ করে যাচ্ছেন, নিশ্চিত থাকেন তারা এক গহীন অন্ধকার কূপের ভিতর ইতিমধ্যে ৫০ ভাগ ডুবে গেছেন। বাকি ৫০ ভাগ ডুবতে আর বেশি দেরী হবেনা। আর ১০০ ভাগ ডুবে গেলে কেল্লাফতে অর্থাৎ শয়তানের বাজিমাত..!!

মনে রাখবেন, এ সমস্ত কাজ মানুষের ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, সংসার জীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় জীবন পর্যন্ত প্রভাব পড়ে যায়। এক সময় এসে ভুক্তভোগী ব্যক্তির সমাজ সংসার, জীবন যৌবন, সুখ শান্তি সবকিছু ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। অনেক সময় শুনেছি, পড়েছি ও দেখেছি তখন তাদের আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোনো পথ খোলা থাকে না। আর যারা বেঁচে থাকে তারা একুল-ওকুল দু"কুল সবকিছু হারিয়ে অসহনীয় দূ:খ-বেদনা আর দুঃসহ জীবন যন্ত্রণার মধ্যে নিদারুণ কষ্টে কালযাপন করে।

সুতরাং সময় থাকতে আমাদের সকলের সাবধানতা অবলম্বন করা উচিৎ। সুন্দর জীবনযাপন করা উচিৎ। সৎ, বিশুদ্ধ ও পবিত্র জীবনযাপনের মাধ্যমে ব্যক্তিগত এবং নিজের সংসার তথা পরিবারের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গঠন তথা শান্তিময় জীবনের পথে নিজেকে এগিয়ে নেয়া উচিৎ। প্রত্যেকের চেষ্টা করা উচিৎ নিজের পরিবার, সংসার, সমাজ, পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিকতার কাছে নিজেকে বিশ্বস্ত, সৎ, চরিত্রবান, ব্যক্তিত্ববান

ও পবিত্রবান হিসেবে উপস্থাপন করা।

তাহলেই দেখবেন; দুনিয়া ও পরকালের সীমাহীন কল্যান, মঙ্গল, সম্মান ও বিধাতার অশেষ রহমত বরকত এবং নেয়ামত সমূহকে হাতছানি দিয়ে আপনার কাছে ডাকতে হবেনা। বরং তারাই নিজে থেকে আপনার ঘরের দুয়ারে এসে কড়া নাড়বে।

জগত বিখ্যাত বুজুর্গ ও বিশ্বকবি ড.আল্লামা ইকবাল (রহঃ), যিনি পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার ৩০ বছর পূর্বে স্বপ্নে দেখেছিলেন, ৭ টি প্রদেশ নিয়ে একটি দেশ গঠিত হবে, যার নাম হবে পাকিস্তান। হয়েছিলও তা-ই।

তিনি বলেন-"খুদি কো কর ইতনা বুলন্দ হার তাকদীর সে পেহলে, খোদ খোদা বন্দে পোছে , বান্দা তেরি রেজা কেয়া হায়"।

অর্থাৎঃ "তোমার সকল কর্ম সম্পাদনের আগে তোমার অন্তরকে এতটাই উন্নত (বিশুদ্ধ) কর, যেন স্বয়ং আল্লাহ তোমার কাছে জানতে চায়, হে আমার বান্দা, তোমার কি প্রয়োজন?"

মহান আল্লাহতায়ালা যেন আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ দান করেন এবং বিশুদ্ধ জীবনযাপন ও নেক আমল করার তৌফিক দান করেন, আমীন।

ধন্যবাদ সবাইকে।

- আলী ইউছুফ

১৭/১১/২৩ ইং

(Ali Yousuf এর ফেসবুক ওয়াল থেকে সংগৃহীত)

👉 👉 [এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রায় সকল পোস্ট-ই ফেসবুক থেকে সংগৃহীত। উক্ত লেখার বক্তব্য ও দায়-দায়িত্ব লেখকের একান্ত নিজস্ব। তাই প্রকাশিত লেখার বিষয়ে কোনো মতামতের জন্য এডমিন দায়ী নয়।]