এই মহানায়ক তরুণ বয়সে একদিন সুদানে যাচ্ছিলেন মরুভূমির মধ্য দিয়ে। পথে এক মরু সিংহের মুখোমুখি হোন কাফেলা। এবং সবাই ভীতসন্ত্রস্ত হলেও ওমর বিন্দুমাত্র ভয় না পেয়ে সিংহের সাথে লড়াই করে মেরে ফেলেন। ভীষণ সাহস আর আত্মবিশ্বাস ছিলো তার মধ্যে।
এ ঘটনা থেকে তিনি আসাদ আল-সাহারা নামে পরিচিত হয়ে ওঠেন। একসময় তিনি কোরআন ও আরবি ভাষার শিক্ষক ছিলেন। শৈশবেই হাফেজ হয়েছিলেন।
কিন্তু পরবর্তী সময়ে একজন সাহসী গেরিলা যোদ্ধা ও বেদুইন নেতা হিসেবে সমস্ত বিশ্বে পরিচিত হয়ে ওঠেন।
মাতৃভুমি বাচাতে তার প্রতিশ্রুতি ছিলো -
★‘আমরা কখনই আত্মসমর্পণ করব না। আমরা জিতব নতুবা মরব।’
তবে দুর্ভাগ্য যে একদিন ওমর মুখতার ঘোড়ায় চড়ে মরুভূমিতে পথ চলছিলেন। এমতাবস্থায় তাঁর উপর আক্রমণ করা হয়। তিনি মরুভূমির উত্তপ্ত বালির উপর গুরুতরভাবে আহত হন। পরে ইতালীয় সেনাবাহিনী ৭৩ বছর বয়সী আল মুখতারকে আহত অবস্থায় গ্রেফতার করেন এবং প্রকাশ্য বিশাল আয়োজন করে ২০ হাজার বন্দির সামনে ফাসির রশিতে ঝুলিয়ে তাকে শহীদের মিছিলে শামিল করেন।
তাকে ফাসির আগে অনেক সমঝোতার প্রস্তাব দেওয়া হয়।কিন্তু তিনি বলেন-
যতক্ষন পর্যন্ত আমি শহীদ অথবা বিজয়ের যে কোন একটি লাভ না করব, ততক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাবএবং আমি আল্লাহর নামে শপথ করছি যিনি অন্তর্যামী , এই মূহুর্তে যদি আমার হাত বাঁধা না থাকত তাহলে আমি খালি হাতেই তোমাদের উপর ঝাপিয়ে পড়তাম।
ফাসিতে ঝুলানোর সময় তাকে বলা হল,
সে ইচ্ছা করলে তার সর্বশেষ যে কোন কথাই বলতে পারে। তিনি তার প্রতিক্রিয়ায় উচ্চারণ করলেন কুরাআনের আয়াত:
নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহরই এবং আল্লাহর কাছেই ফিরে যাবো।
তিনি ছিলেন মাঝারী উচ্চতা ও ঘন দাড়ি বিশিষ্ট। তাঁর ঠোটে সর্বদা মুচকি হাঁসি লেগে থাকতো। চেহারায় ছিল গাম্ভীর্যের ছাপ। তাঁর কথা ছিল খুবই ভারসাম্যপূর্ণ-আবেগময় যা শুনতে মানুষ কখনো বিরক্তিবোধ করতো না। তাঁর কথায় আঞ্চলিক টান ছিল। আওয়াজ ছিল খুব উঁচু ও স্পষ্ট।
তখনকার লড়াই টা ছিল আজকের ফিলিস্তিন আর ইসরাইলদের লড়াইয়ের মতো। তিনি টানা ২০ বছর ইতালির জালিমদের বিরুদ্ধে লড়াই করেন। মাত্রা ১-৩ হাজার সঙ্গী নিয়ে ইতালীর শত শত ট্যাংক,যুদ্ধবিমান ধ্বংস করেন।এমনকি ইতালিয় সেনাবাহিনীদের জন্য ওমর ছিলো এক আতংকের নাম।
শহীদ ওমর মুখতার (রহ.) নিজের জীবনের সময়টাকে দুইভাগে ভাগ করে নিয়েছিলেন। তিনি দিনের বেলা লড়াইয়ের ময়দানে কাটাতেন আর রাতের বেলা ইবাদত বন্দেগীতে কাটিয়ে দিতেন। মাত্র ৩/৪ ঘন্টা রাতে ঘুমুতেন।
প্রচণ্ড যুদ্ধের দিনগুলোতেও প্রতি সপ্তাহে তিনি একবার কোরআন শরীফ খতম করতেন। (সুবহানাল্লাহ)
১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৩১ ঈসায়ী, সকাল ৯টার সময় হাতে বেড়ি পড়া অবস্থায় ওমর ইবনে মুখতারকে জল্লাদের হাতে সোপর্দ করা হয়। ফাঁসির মঞ্চে উঠানোর পর আকাশে ঝাঁকে ঝাঁকে জঙ্গি বিমান মহড়া দিতে থাকে যেন সে পালিয়ে না যায় অথচ তার বয়স তখন ৭৩।
মূলত তার বয়স কত ছিলো এটার দিকে বাতিলের চিন্তা ছিলো না। ওরা ভয় পেত ওমরের তাকওয়াকে।আপনি যখন আল্লাহকে ভয় পাওয়া শুরু করবেন তখন গোটা দুনিয়া আপনাকে ভয় করবে,সমীহ করবে,সম্মান করবে।আজ মুসলিম যত বেশি হিম্মৎ হারা হচ্ছে তাকওয়া থেকে দূরে সরে যাচ্ছে ততবেশি পরাজিত লাঞ্চিত অপমানিত হচ্ছে।
সুতরাং ব্যাক্তিজীবন বা পারিবারিক জীবন যেখানেই আপনি সম্মানিত হতে চান সেখানেই তাকওয়াকে আঁকড়ে ধরুন।
👉 👉 [এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত পোস্টগুলো ফেসবুক এবং ইমেইল থেকে সংগৃহীত। উক্ত লেখার বক্তব্য ও দায়-দায়িত্ব লেখকের একান্ত নিজস্ব। তাই প্রকাশিত লেখার বিষয়ে কোনো মতামতের জন্য এডমিন দায়ী নয়।]
No comments